লেখকঃ
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
জন্ম: ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত বহেরচর-ক্ষুদ্রকাঠি গ্রাম
মৃত্যু: ১৯ মার্চ, ২০০১
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিভিল সার্ভিসে যোগদান এবং সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদে দায়িত্ব পালন
বাংলাদেশ সরকারের কৃষি ও পানিসম্পদ মন্ত্রী (১৯৮২)
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (১৯৮৪)
বাংলা একাডেমী পুরষ্কার (১৯৭৯) এবং একুশে পদক
জন্ম: ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৮, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত বহেরচর-ক্ষুদ্রকাঠি গ্রাম
মৃত্যু: ১৯ মার্চ, ২০০১
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিভিল সার্ভিসে যোগদান এবং সরকারের বিভিন্ন উচ্চপদে দায়িত্ব পালন
বাংলাদেশ সরকারের কৃষি ও পানিসম্পদ মন্ত্রী (১৯৮২)
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (১৯৮৪)
বাংলা একাডেমী পুরষ্কার (১৯৭৯) এবং একুশে পদক
আমি
কিংবদন্তির
জনশ্রতি; যা জাতির ঐতিহ্যের পরিচয়বাহী
কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
তাঁর
করতলে
হাতের মুঠোয়
পলিমাটির সৌরভ ছিল
তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল।
মানুষের উপর অত্যাচারের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এখানে। শত্রুরা ভীরু কাপুরুষের মতো ক্রীতদাসের উপর পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
রক্তজবা লাল বলে পিঠের ক্ষতের সাথে তুলনীয়।
তিনি অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা বলতেন
অরণ্য এবং
শ্বাপদের
হিংস্র মাংসাশী প্রাণী
কথা বলতেন
পতিত জমি আবাদের কথা বলতেন
তিনি কবি এবং কবিতার কথা বলতেন।
পূর্বপুরুষদের মুখে সৃষ্টি, স্রষ্টা, অতীত ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধির কথা শোনা।
পূর্বপুরুষরা যে মুক্তির আকাঙ্খা শোনাতেন তা-ই কবির দৃষ্টিতে শব্দবন্ধ ‘কবিতা’।
পূর্বপুরুষরা যে মুক্তির আকাঙ্খা শোনাতেন তা-ই কবির দৃষ্টিতে শব্দবন্ধ ‘কবিতা’।
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা।
ইতিবাচক সকল শব্দই সত্যের কথা বলে, এই সত্যই কবিতা।
কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
এই চিত্রকল্পের সঙ্গে কবিতাকে অভেদ কল্পনা করা হয়েছে। কবিতা যেন কবির জমিতে যত্নে ফলানো ফসল।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ঝড়ের আর্তনাদ শুনবে।
সত্য থেকে বিচ্যুত থাকলে আত্মার প্রশান্তি থাকবেনা, অশান্তি প্রবল হবে।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
নিজেদের উৎস ও ভূমি থেকে বঞ্চিত হওয়া। দিগন্তের বিশালতা ও সৌন্দর্যকে নিজের ভেতর অনুভব করতে না পারা।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে।
কবিতা না শুনতে জানলে মানুষ সত্য থেকে বঞ্চিত হয়, আত্মার মুক্তি ঘটে না।
আমি উচ্চারিত সত্যের মতো
স্বপ্নের কথা বলছি।
উনোনের আগুনে আলোকিত
একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি।
মুক্তির প্রত্যাশা, মুক্ত জীবনের প্রত্যাশা এখানে ব্যক্ত। মানুষের মুক্ত জীবনের সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা।
একটি উজ্জ্বল জানালার কথা বলছি। মুক্তির প্রত্যাশা, মুক্ত জীবনের প্রত্যাশা এখানে ব্যক্ত। মানুষের মুক্ত জীবনের সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা।
আমি আমার মায়ের কথা বলছি,
কবি মায়ের কথার মাধ্যমে প্রকৃতি ও স্বদেশের রুপ তুলে ধরেছেন।
তিনি বলতেন প্রবহমান নদী
যে সাঁতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে। মানুষের জীবনে গতি থাকলে সমাজ গতিমান ও চিরস্থায়ী হয়।
যে সাঁতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে। মানুষের জীবনে গতি থাকলে সমাজ গতিমান ও চিরস্থায়ী হয়।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে নদীতে ভাসতে পারে না।
আত্মশক্তি অর্জন করতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না।
জীবনের সত্য উপলব্ধি করে কল্পনাবিলাসী হতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না।
কবিতা শোনার ক্ষমতা না থাকলে মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শোনার মানসিকতা থাকে না।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
কবিতায় ‘কিংবদন্তি’ শব্দটি হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যের প্রতীক।
আমি আমার পূর্বপরুষের কথা বলছি।
আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি
আপনজনের জন্য উৎকন্ঠা। পূর্বজনদের জন্য স্নেহ-ভালোবাসা স্মরণ।
গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলছি
সম্ভাবনার বিনষ্টি লক্ষ্য করা। স্বজন হারানোর বেদনা, মৃত্যুকে কাছে থেকে দেখা, মানবিকতাবোধ।
আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি।
ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়
শুধু ভালোবাসায় গন্ডিবদ্ধ থাকলে মাকে হারাতে হয়। মাকে রক্ষা করতেই ভালোবাসা ত্যাগ করতে হয়। দেশমাতৃকার রক্ষার জন্য ভালোবাসা তুচ্ছ করে যুদ্ধে যেতে হয়।
যুদ্ধ আসে ভালোবেসে
মায়ের ছেলেরা চলে যায়,
আমি আমার ভাইয়ের কথা বলছি।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সন্তানের জন্য মরতে পারে না।
সত্যদর্শন ও আত্মদর্শন করলে এবং দৃঢ়সংকল্প থাকলে প্রিয়জনের জন্য জীবন বিসর্জন সম্ভব।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে ভালোবেসে যুদ্ধে যেতে পারে না।
যে কবিতা শুনতে জানে না
সে সূর্যকে হৃদপিণ্ডে ধরে রাখতে পারে না।
সর্বশক্তি ও সামর্থ্য দিয়ে মুক্তির অনিবার্যতা হৃদয়ে ধারণ করতে পারে না।
আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
পূর্বপুরুষের সাহসী ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে কথা বলা হয়েছে।
তাঁর পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল
কারণ তিনি ক্রীতদাস ছিলেন।
যে কর্ষণ করে
শস্যের সম্ভার তাকে সমৃদ্ধ করবে।
পরিশ্রম করলে ফল অবশ্যই পাওয়া যাবে।
যে মৎস্য লালন করে
প্রবহমান নদী তাকে পুরস্কৃত করবে।
শস্যের সম্ভার ও নদীর পুরস্কার আমাদের জানিয়ে দেয় বাংলার প্রকৃতির ধনপ্রাচুর্য ও পিতৃপুরুষের সমৃদ্ধি।
যে গাভীর পরিচর্যা করে
প্রাণের ও প্রকৃতির পরিচর্যা।
জননীর আশির্বাদ তাকে দীর্ঘায়ু করবে।
যে
লৌহখন্ডকে প্রজ্জ্বলিত
যুদ্ধের সংকেত, কঠোর পরিশ্রম, সৃষ্টির উন্মাদনা।
করে
ইস্পাতের তরবারি তাকে সশস্ত্র করবে।
দীর্ঘদেহ পুত্রগণ
বাংলামায়ের বলিষ্ঠ সন্তান।
আমি তোমাদের বলছি।
আমি আমার মায়ের কথা বলছি
বোনের মৃত্যুর কথা বলছি
ভাইয়ের যুদ্ধের কথা বলছি
আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি।
আমি কবি এবং কবিতার কথা বলছি।
সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুথান কবিতা
সত্য, অবশ্যম্ভাবী, সুন্দর প্রতিষ্ঠার সংগ্রামই কবিতা।
সুপুরুষ ভালোবাসার সুকন্ঠ সংগীত কবিতা
কবিতা স্নিগ্ধ, সুরেলা, নান্দনিকা।
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা
কবিতা সত্যের সন্ধান দেয়, আত্মাকে মুক্তির পথ দেখায়।
রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।
কবিতায় প্রতিবাদ ও মুক্তির কথা থাকে। রক্তঝরা প্রতিরোধই হলো স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের পূর্বশর্ত।
আমরা কি তাঁর মতো কবিতার কথা বলতে পারবো
আমরা কি তাঁর মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো
এ কবিতায় কবির শেকড়সন্ধানী মনোভাব কাজ করেছে। এটি আত্মচেতনার, আত্মপরিচয়ের কবিতা। এদেশের মানুষ সভ্যতার আদি থেকেই অত্যাচার ও শত্রুর ভীরু আক্রমণের শিকার বলে আজও তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তাই কবি ক্রীতদাসের মতো লড়াই করে টিকে থাকার যুদ্ধে লিপ্ত তাঁর পূর্বপুরুষ ও মানবমুক্তির আকাঙ্খায় সোচ্চার থেকেছেন। এই মুক্তির লক্ষ্যে যুদ্ধ নয় বরং সৌন্দর্যের সশস্র অভ্যুত্থান প্রয়োজন। সশস্র অভ্যুত্থান-সুন্দর দৃশ্য যা কবিতার মতোই প্রাণসঞ্চারী ও শৈল্পিক।
মাস্টারপিস
ReplyDeleteকবির জন্ম তারিখে ভুল অাছে।।১৯৩৮ নয় ১৯৩৪ হবে।
ReplyDeleteখুব সুন্দর ভাবে ব্যাখা দিয়েছেন ধন্যবাদ।